ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম
তলোয়ারের শক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বা বিস্তৃত হয় নাই, ভালবাসা দিয়েই ইসলাম ধর্ম আসন গেরেছে। তায়েফে পাথরের আঘাতে মুহাম্মদ(সাঃ) এর জুতা পর্যন্ত
রক্তে ভিজেগিয়েছিলো, এর জবাবে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) তেয়েফবাসীদের জন্য শান্তির দোয়া করেছেন।
যে বুড়ী তাঁর পথে কাঁটা দিয়ে রাখতো, তিনি সেই বুড়ীর অসুখে সেবা করেছেন। যে মক্কাবাসী
তাঁর সাথীদের দুই পা দুই উটের সাথে বেঁধে টানাদিয়ে মাঝখান থেকে ছিরেফেলতো, তাদেরকে
যুদ্ধলব্ধ দাস হিসাবে পাওয়ার পর মুক্ত করে দিয়েছেন। যে
মক্কাবাসী নবীজী(সাঃ)-কে বছরের পর বছর অবরোধ করে রেখে ঘাস-পাতা খেতে বাধ্য করেছিলো, শেষপর্যন্ত তাঁকে
হত্যা করার
চেষ্টা করেছিলো, প্রান বাচানোর
জন্য নবীজী(সাঃ) ও তাঁর সাথীরা গোপনে মক্কা থাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমনকি মক্কা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরও যে
মক্কাবাসীরা নবীজী(সাঃ) ও তাঁর সাথীদের ধংস করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। মক্কা বিজয়ের
পর নবীজী(সাঃ) সেইসব অমানুষদের সবাইকেই ক্ষমা করে দিয়েছেন।
মিশর বিজয়ের পর মুসলমানরা পিরামিড-স্ফিংস ভাঙ্গেনাই, বা বামিয়ানের বুদ্ধ মূর্তির গায়ে মুসলিম বিজয়ীরা হাত দেয় নাই। মিশরে কুমারী বলী দেয়ার প্রচলন ছিল, ইসলাম সেটা বন্ধ করে।
মুসলমানরা ৪০০ বছর শাষন করার পরও ভারত হিন্দুপ্রধান দেশ। মুসলিম শাসকরা জোর খাটালে ভারত থেকে স্পেন পর্যন্ত একজন মানুষও অমুসলিম থাকতো না।
মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবি-অনুসারিরা সব সময়ই কঠোরতা, সন্ত্রাস, ঘৃণা-হত্যা ও জোর-জুলুমের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁদের মূলনীতি ছিলো “ভালবাসা”। আর এটাই ইসলাম ধর্ম।
এর পর আনেক মানুষ ইসলাম ধর্মের নাম নিয়ে শুধু ক্ষমতা পাওয়ার জন্য কঠোরতা, সন্ত্রাস, ঘৃণা-হত্যা ও জোর-জুলুম করেছে। মুখে যাই থাকুক মূলনীতি ছিল সন্ত্রাস ও ঘৃণা, মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবি-অনুসারিদের মূলনীতি ছিল ভালোবাসা ও ক্ষমা। আজাজিল শয়তান আল্লাহ-তায়ালার আদেশে মানুষকে সেজদা করতে রাজি হয়নাই বলে তাকে কাফের ঘোষণা করা হয়েছে। এখন যারা ইসলামের মূলনীতি ও মুহাম্মদ(সাঃ) -কে মানে না, যাদের মূলনীতি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবিদের ঠিক বিপরীত তারা কিভাবে মুসলমান হয়?
ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থানের একটা প্রেক্ষাপট থাকে, ইসলামি জঙ্গিরা অলৌকিকভাবে আকাশ থেকে নেমে আসে নয়াই। আশির দশকে সাদ্দাম হোসেন ছিলেন মার্কিন প্রিয়পাত্র, ইরান ইরাক যুদ্ধের সময় সাদ্দামকে ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার চোখে সেকুলারিজমের পোস্টারবয় মনে হয়েছে, কারণ তখন তিনি লড়ছিলেন ইসলামি বিপ্লব-উত্তর ইরানের বিরুদ্ধে। সেই সময় ইরাকের কুর্দিদের নার্ভ গ্যাস দিয়ে হত্যা করে সাদ্দামের সেনাবাহিনী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান কুর্দিদের কাছে এর আগে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন ইরান-ইরাক যুদ্ধে ইরানের পক্ষ নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেবে, কিন্তু কুর্দিরা ইরানের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে নামলে রিগ্যানের কাছ থেকে কোনো সহায়তা আসে নাই।
সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছিলো, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত-বিরোধী মুজাহেদিনদের ব্যাপক মদদ দেয়। জিমি কার্টারের ন্যাশনাল সিকিওরিটি এডভাইজারকে এক ইন্টারভিউয়ে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিলো এভাবে মুজাহিদিনদের কেনো মদদ দেয়া হচ্ছে তখন তিনি কি জবাব দিয়েছিলেন, মানব সভ্যতাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্টদের হাত থেকে "মুক্ত" করা নাকি অন্য যে কোনো মানবিক বিবেচনার চেয়ে জরুরী!
ইরাকে আমাদের সময়ের নিকৃষ্টতম যুদ্ধাপরাধগুলো সংঘটিত করা হয়েছে, গণহত্যা চালানো হয়েছে। নুরেমবার্গ ট্রায়ালের নজির ফলো করলে এন্টায়ার বুশ এডমিন্সট্রেশনকে একসাথে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়ার কথা! কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধের বিচার কে করবে? আবু গারিব কারাগারে কি সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে? সেখানে কি রুশো ভলতেয়াররা এনলাইটেনমেন্টের চর্চা করেছেন?? ইরাকিদের আলোকিত করেছেন???
নব্বইয়ের দশকে যুগোশ্লাভিয়া যুদ্ধের সময় সার্বরা বসনিয়ায় ভয়াবহ এক গণহত্যা ও ধর্ষণযজ্ঞ চালাচ্ছিলো। সার্বদের পেছনে ছিলো রাশিয়া, বসনিয়ার পেছনে আমেরিকা। পশ্চিমের কুমিররা তখন 'বসনিয়ার মা-বোনদের' জন্য কাঁদছিলো। কান্নার আসল কারণ বুঝা গেল বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়া 'স্বাধীন' হওয়ার পর, যখন দেখা গেলো বসনিয়ার মাটির নিচের সব খনিজ সম্পদ চলে যাচ্ছে মার্কিন কর্পোরেশনগুলোর দখলে, এটা বুঝা গেলো যে কুমিররা এমনি এমনি কাঁদে না কোনোদিন। কসভো লিবারেশন আর্মি নামে যে সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছিলো সিআইএ নিজ হাতে তাতে রিক্রুট করেছিলো অসংখ্য আল কায়েদা অপারেটিভকে।
আইএস ছিলো আল কায়েদার ইরাকি শাখা। শিয়া মিলিশিয়া যখন সুন্নীদের ওপর অত্যাচার চালায়, খুন ধর্ষণ করে, তখন এরা সুন্নীদের মধ্যে পপুলার হয়ে ওঠে। ইরাকে শিয়ারা সংখ্যাগুরু হলেও সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে সুন্নীরা সংখ্যাগুরু। তাই দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আইএসের রিক্রুটরা আসে যাদের অনেকেই তাদের বুঝমতো সুন্নী খেলাফত কায়েম করতে চায়। কিন্তু ইরাকের সুন্নী ছেলেদের অনেকেরই খেলাফত নিয়ে কোনো হেডেক নাই, হুরপরীর লোভেও আইএসে যায় না তারা, যায় শিয়া মিলিশিয়ার হাতে অত্যাচারিত হওয়ার কারণে সাম্প্রদায়িক জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার অন্ধ আকাঙ্ক্ষায়। এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এই ভূখণ্ডেও আমরা দেখেছি। সেই চল্লিশের দশকে।
লিবিয়ার গাদ্দাফিকে উৎখাত করে কি লিবারাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে?হিলারি ক্লিন্টন একা দেশটিকে ধবংস করে দিয়েছেন, ওয়ালস্ট্রিটের সেই মহীয়সী লিবারালরা যাকে ভালো ভাবেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে!
সিরিয়ায় একদিকে আসাদ-ইরান-চীন আর অন্যদিকে আমেরিকা-ইজরায়েল-তুরস্ক-সৌদি-ইইউ, আর আইএস জঙ্গিরা চাইছে সিরিয়ার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। তিন পক্ষের যুদ্ধে লাখো মানুষ মারা যাচ্ছে। সিরিয়ার শিশু তুরস্কের সমুদ্রতীরে মরে পড়ে থাকছে। সুন্নী ইসলামি জঙ্গিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সৌদি রাজতন্ত্র আর পাকিস্তানের আইএসআই, আজ পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই, বরং এদের কোলে নিয়ে "জঙ্গিবাদ নির্মূলে" নেমেছে।
খবরঃ যুগান্তর ডেস্ক | প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০১৫
দুনিয়াব্যাপী ‘ইসলামী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার যুদ্ধের স্বঘোষিত খলিফা ও সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা খলিফা আবুবকর আল বাগদাদি মুসলমান নন, তার আসল নাম আকা ইলিয়ট শিমন। এর চেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামী শাসনব্যবস্থা’ কায়েমের আদর্শে মত্ত আইএস ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সৃষ্টি। এ জঙ্গিগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যেকেই মোসাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মোসাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতেই আইএস জঙ্গিদের ‘যুদ্ধকৌশল’ শেখানো হয়।
প্যারিসে ভয়াবহ হামলার পর কিউবার সাবেক নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো ও মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, সংবাদ সম্মেলন করে দু’জনই বলেছেন, আইএস ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী অস্ত্র। বিশ্বব্যাপী নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইএস নামের এ ভয়ানক কালসাপ মাঠে নামিয়েছে তারা।
আমেরিকান ফ্রি প্রেসের প্রতিবেদন জানায়, ইহুদি পিতা-মাতার কোলে জন্ম নেন বাগদাদি। এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যানুযায়ী, বাগদাদিকে টানা এক বছর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে মোসাদ। একই সময়ে আরবি ভাষা ও ইসলামী শরিয়ার ওপর কোর্স করেছেন বাগদাদি। এ সময় তিনি ইব্রাহিম ইবনে আওয়াদ ইবনে ইব্রাহিম আল বদরি নাম ধারণ করেন। তবে বাগদাদির পরিচয় সম্পর্কে ছড়ানো হয়েছে- তিনি ১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই ইরাকের সামারায় জন্মগ্রহণ করেন। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের সময় সামারায় একটি মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন বাগদাদি। পরে তিনি ‘আমিরে দায়েশ’ উপাধি গ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজ প্রচারিত একটি ভিডিওর বরাত দিয়ে সোশিও-ইকোনমিক হিস্ট্রি নামের একটি ওয়েবসাইট দাবি করেছে, মার্কিন প্রভাবশালী সিনেটর জন ম্যাককেইন আবুবকর আল বাগদাদিসহ কয়েকজন আইএস কর্মকর্তা ও সিরিয়ার বিদ্রোহী কয়েকজন নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। ২০১৩ সালের জুনে যখন এ বৈঠকটি হয়, তখন বাগদাদির মুখে লম্বা দাড়ি ছিল না। ওই বৈঠকে বাগদাদির সহযোগী আইএসের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ নূরও উপস্থিত ছিলেন। উইকিপিডিয়ায় প্রদর্শিত আবুবকর বাগদাদির ছবির সঙ্গে ওই ছবির মিল পাওয়া গেছে। রিসার্চ নামের একটি গবেষণা ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে আবুবকর আল বাগদাদি। পলিটিসাইট ডটকমের তথ্যানুযায়ী, সিআইএ’র তত্ত্বাবধানেও বাগদাদি সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ইরাকের উম কাসর এলাকায় মার্কিন কারাগারে সিআইএ তাকে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ২০১২ সালে জর্ডানের একটি গোপন ক্যাম্পে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্স কমান্ড বাগদাদিসহ তার সহযোগী অনেককে প্রশিক্ষণ দেয়। আইএসের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে ইসরাইলের ভূখণ্ড বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে মোসাদের। আল কায়দার সাবেক শীর্ষ কমান্ডার ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক জিহাদ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা নাবিল নাইম বৈরুতের টিভি চ্যানেল আল মাইদিনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আল কায়দার বর্তমান নেতারা ও আইএস সিআইএ’র হয়ে কাজ করছে। এ উদ্দেশ্যে শিয়া-সুন্নি বিরোধ তারাই উসকে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এবার বাংলাদেশঃ
আমাদের এখানে ইসলামি জঙ্গিবাদ ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে সেই বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে। সেই একই সময় চালু হয় ক্রসফায়ার কালচার। র্যাব গঠিত হয় ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইচ্ছায়। শুরুতে জেএমবির বাংলা ভাইদেরকে স্থানীয় পুলিশ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে স্থানীয় কমিউনিস্ট নিধনে, পরে যখন ইসলামি জঙ্গিবাদ একটা ন্যাশনাল ইস্যু হয়ে ওঠে, কিছু ইসলামি জঙ্গিকে শাস্তি দেয়া হয়।
আওয়ামি লিগের ফার্স্ট টার্মের শুরুতেই বিডিআর বিদ্রোহের নাম করে আর্মির কিছু মেধাবী ও সাহসী অফিসার সরান হল, একইসাথে বিডিআর এর কার্যকারিতা খর্ব করা হল। আর্মি এখন আওয়ামি লিগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। পুলিশ আর র্যাব পরিণত হয়েছে আজকের রক্ষীবাহিনীতে। তবে এরাও আজ আর্মির প্রতি বিরূপ না, অন্তত ১৯৭১ পরবর্তী-কালের রক্ষীবাহিনী আর সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব পাবেন না।
যখনই কোনো জঙ্গি ধরা পড়ছে, তাদেরকে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের নামে মেরে ফেলা হচ্ছে, কারণ সরকার জানে জঙ্গিদের পেছনে অনেক বড়ো কারো মদদ আছে। কোনো তদন্ত ছাড়া সরকার বিএনপি-জামাতের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে আর দাবি করছে দেশে নাকি কোনো জঙ্গি নাই। এখান থেকে স্রেফ একটা সিদ্ধান্তেই পৌঁছানো যায়।
হয় সরকার নিজেই সমস্ত জঙ্গিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, অথবা যারা করছে, সে তাদের সাথে আপোস করে থাকতে চাইছে। ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। দ্বিতীয়টি সম্ভাবনা বেশি। সেই ক্ষেত্রে কাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে? ভারতকে? বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারলে কার লাভ?
মিশর বিজয়ের পর মুসলমানরা পিরামিড-স্ফিংস ভাঙ্গেনাই, বা বামিয়ানের বুদ্ধ মূর্তির গায়ে মুসলিম বিজয়ীরা হাত দেয় নাই। মিশরে কুমারী বলী দেয়ার প্রচলন ছিল, ইসলাম সেটা বন্ধ করে।
মুসলমানরা ৪০০ বছর শাষন করার পরও ভারত হিন্দুপ্রধান দেশ। মুসলিম শাসকরা জোর খাটালে ভারত থেকে স্পেন পর্যন্ত একজন মানুষও অমুসলিম থাকতো না।
মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবি-অনুসারিরা সব সময়ই কঠোরতা, সন্ত্রাস, ঘৃণা-হত্যা ও জোর-জুলুমের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁদের মূলনীতি ছিলো “ভালবাসা”। আর এটাই ইসলাম ধর্ম।
এর পর আনেক মানুষ ইসলাম ধর্মের নাম নিয়ে শুধু ক্ষমতা পাওয়ার জন্য কঠোরতা, সন্ত্রাস, ঘৃণা-হত্যা ও জোর-জুলুম করেছে। মুখে যাই থাকুক মূলনীতি ছিল সন্ত্রাস ও ঘৃণা, মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবি-অনুসারিদের মূলনীতি ছিল ভালোবাসা ও ক্ষমা। আজাজিল শয়তান আল্লাহ-তায়ালার আদেশে মানুষকে সেজদা করতে রাজি হয়নাই বলে তাকে কাফের ঘোষণা করা হয়েছে। এখন যারা ইসলামের মূলনীতি ও মুহাম্মদ(সাঃ) -কে মানে না, যাদের মূলনীতি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবিদের ঠিক বিপরীত তারা কিভাবে মুসলমান হয়?
ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থানের একটা প্রেক্ষাপট থাকে, ইসলামি জঙ্গিরা অলৌকিকভাবে আকাশ থেকে নেমে আসে নয়াই। আশির দশকে সাদ্দাম হোসেন ছিলেন মার্কিন প্রিয়পাত্র, ইরান ইরাক যুদ্ধের সময় সাদ্দামকে ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার চোখে সেকুলারিজমের পোস্টারবয় মনে হয়েছে, কারণ তখন তিনি লড়ছিলেন ইসলামি বিপ্লব-উত্তর ইরানের বিরুদ্ধে। সেই সময় ইরাকের কুর্দিদের নার্ভ গ্যাস দিয়ে হত্যা করে সাদ্দামের সেনাবাহিনী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান কুর্দিদের কাছে এর আগে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন ইরান-ইরাক যুদ্ধে ইরানের পক্ষ নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দেবে, কিন্তু কুর্দিরা ইরানের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে নামলে রিগ্যানের কাছ থেকে কোনো সহায়তা আসে নাই।
সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছিলো, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত-বিরোধী মুজাহেদিনদের ব্যাপক মদদ দেয়। জিমি কার্টারের ন্যাশনাল সিকিওরিটি এডভাইজারকে এক ইন্টারভিউয়ে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিলো এভাবে মুজাহিদিনদের কেনো মদদ দেয়া হচ্ছে তখন তিনি কি জবাব দিয়েছিলেন, মানব সভ্যতাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্টদের হাত থেকে "মুক্ত" করা নাকি অন্য যে কোনো মানবিক বিবেচনার চেয়ে জরুরী!
ইরাকে আমাদের সময়ের নিকৃষ্টতম যুদ্ধাপরাধগুলো সংঘটিত করা হয়েছে, গণহত্যা চালানো হয়েছে। নুরেমবার্গ ট্রায়ালের নজির ফলো করলে এন্টায়ার বুশ এডমিন্সট্রেশনকে একসাথে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়ার কথা! কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধের বিচার কে করবে? আবু গারিব কারাগারে কি সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে? সেখানে কি রুশো ভলতেয়াররা এনলাইটেনমেন্টের চর্চা করেছেন?? ইরাকিদের আলোকিত করেছেন???
নব্বইয়ের দশকে যুগোশ্লাভিয়া যুদ্ধের সময় সার্বরা বসনিয়ায় ভয়াবহ এক গণহত্যা ও ধর্ষণযজ্ঞ চালাচ্ছিলো। সার্বদের পেছনে ছিলো রাশিয়া, বসনিয়ার পেছনে আমেরিকা। পশ্চিমের কুমিররা তখন 'বসনিয়ার মা-বোনদের' জন্য কাঁদছিলো। কান্নার আসল কারণ বুঝা গেল বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়া 'স্বাধীন' হওয়ার পর, যখন দেখা গেলো বসনিয়ার মাটির নিচের সব খনিজ সম্পদ চলে যাচ্ছে মার্কিন কর্পোরেশনগুলোর দখলে, এটা বুঝা গেলো যে কুমিররা এমনি এমনি কাঁদে না কোনোদিন। কসভো লিবারেশন আর্মি নামে যে সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছিলো সিআইএ নিজ হাতে তাতে রিক্রুট করেছিলো অসংখ্য আল কায়েদা অপারেটিভকে।
আইএস ছিলো আল কায়েদার ইরাকি শাখা। শিয়া মিলিশিয়া যখন সুন্নীদের ওপর অত্যাচার চালায়, খুন ধর্ষণ করে, তখন এরা সুন্নীদের মধ্যে পপুলার হয়ে ওঠে। ইরাকে শিয়ারা সংখ্যাগুরু হলেও সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে সুন্নীরা সংখ্যাগুরু। তাই দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আইএসের রিক্রুটরা আসে যাদের অনেকেই তাদের বুঝমতো সুন্নী খেলাফত কায়েম করতে চায়। কিন্তু ইরাকের সুন্নী ছেলেদের অনেকেরই খেলাফত নিয়ে কোনো হেডেক নাই, হুরপরীর লোভেও আইএসে যায় না তারা, যায় শিয়া মিলিশিয়ার হাতে অত্যাচারিত হওয়ার কারণে সাম্প্রদায়িক জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার অন্ধ আকাঙ্ক্ষায়। এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এই ভূখণ্ডেও আমরা দেখেছি। সেই চল্লিশের দশকে।
লিবিয়ার গাদ্দাফিকে উৎখাত করে কি লিবারাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে?হিলারি ক্লিন্টন একা দেশটিকে ধবংস করে দিয়েছেন, ওয়ালস্ট্রিটের সেই মহীয়সী লিবারালরা যাকে ভালো ভাবেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে!
সিরিয়ায় একদিকে আসাদ-ইরান-চীন আর অন্যদিকে আমেরিকা-ইজরায়েল-তুরস্ক-সৌদি-ইইউ, আর আইএস জঙ্গিরা চাইছে সিরিয়ার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। তিন পক্ষের যুদ্ধে লাখো মানুষ মারা যাচ্ছে। সিরিয়ার শিশু তুরস্কের সমুদ্রতীরে মরে পড়ে থাকছে। সুন্নী ইসলামি জঙ্গিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সৌদি রাজতন্ত্র আর পাকিস্তানের আইএসআই, আজ পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই, বরং এদের কোলে নিয়ে "জঙ্গিবাদ নির্মূলে" নেমেছে।
খবরঃ যুগান্তর ডেস্ক | প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০১৫
দুনিয়াব্যাপী ‘ইসলামী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার যুদ্ধের স্বঘোষিত খলিফা ও সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা খলিফা আবুবকর আল বাগদাদি মুসলমান নন, তার আসল নাম আকা ইলিয়ট শিমন। এর চেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামী শাসনব্যবস্থা’ কায়েমের আদর্শে মত্ত আইএস ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সৃষ্টি। এ জঙ্গিগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যেকেই মোসাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মোসাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতেই আইএস জঙ্গিদের ‘যুদ্ধকৌশল’ শেখানো হয়।
প্যারিসে ভয়াবহ হামলার পর কিউবার সাবেক নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো ও মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, সংবাদ সম্মেলন করে দু’জনই বলেছেন, আইএস ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী অস্ত্র। বিশ্বব্যাপী নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইএস নামের এ ভয়ানক কালসাপ মাঠে নামিয়েছে তারা।
আমেরিকান ফ্রি প্রেসের প্রতিবেদন জানায়, ইহুদি পিতা-মাতার কোলে জন্ম নেন বাগদাদি। এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যানুযায়ী, বাগদাদিকে টানা এক বছর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে মোসাদ। একই সময়ে আরবি ভাষা ও ইসলামী শরিয়ার ওপর কোর্স করেছেন বাগদাদি। এ সময় তিনি ইব্রাহিম ইবনে আওয়াদ ইবনে ইব্রাহিম আল বদরি নাম ধারণ করেন। তবে বাগদাদির পরিচয় সম্পর্কে ছড়ানো হয়েছে- তিনি ১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই ইরাকের সামারায় জন্মগ্রহণ করেন। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের সময় সামারায় একটি মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন বাগদাদি। পরে তিনি ‘আমিরে দায়েশ’ উপাধি গ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজ প্রচারিত একটি ভিডিওর বরাত দিয়ে সোশিও-ইকোনমিক হিস্ট্রি নামের একটি ওয়েবসাইট দাবি করেছে, মার্কিন প্রভাবশালী সিনেটর জন ম্যাককেইন আবুবকর আল বাগদাদিসহ কয়েকজন আইএস কর্মকর্তা ও সিরিয়ার বিদ্রোহী কয়েকজন নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। ২০১৩ সালের জুনে যখন এ বৈঠকটি হয়, তখন বাগদাদির মুখে লম্বা দাড়ি ছিল না। ওই বৈঠকে বাগদাদির সহযোগী আইএসের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ নূরও উপস্থিত ছিলেন। উইকিপিডিয়ায় প্রদর্শিত আবুবকর বাগদাদির ছবির সঙ্গে ওই ছবির মিল পাওয়া গেছে। রিসার্চ নামের একটি গবেষণা ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে আবুবকর আল বাগদাদি। পলিটিসাইট ডটকমের তথ্যানুযায়ী, সিআইএ’র তত্ত্বাবধানেও বাগদাদি সামরিক প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ইরাকের উম কাসর এলাকায় মার্কিন কারাগারে সিআইএ তাকে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ২০১২ সালে জর্ডানের একটি গোপন ক্যাম্পে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্স কমান্ড বাগদাদিসহ তার সহযোগী অনেককে প্রশিক্ষণ দেয়। আইএসের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে ইসরাইলের ভূখণ্ড বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে মোসাদের। আল কায়দার সাবেক শীর্ষ কমান্ডার ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক জিহাদ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা নাবিল নাইম বৈরুতের টিভি চ্যানেল আল মাইদিনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আল কায়দার বর্তমান নেতারা ও আইএস সিআইএ’র হয়ে কাজ করছে। এ উদ্দেশ্যে শিয়া-সুন্নি বিরোধ তারাই উসকে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এবার বাংলাদেশঃ
আমাদের এখানে ইসলামি জঙ্গিবাদ ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে সেই বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে। সেই একই সময় চালু হয় ক্রসফায়ার কালচার। র্যাব গঠিত হয় ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইচ্ছায়। শুরুতে জেএমবির বাংলা ভাইদেরকে স্থানীয় পুলিশ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে স্থানীয় কমিউনিস্ট নিধনে, পরে যখন ইসলামি জঙ্গিবাদ একটা ন্যাশনাল ইস্যু হয়ে ওঠে, কিছু ইসলামি জঙ্গিকে শাস্তি দেয়া হয়।
আওয়ামি লিগের ফার্স্ট টার্মের শুরুতেই বিডিআর বিদ্রোহের নাম করে আর্মির কিছু মেধাবী ও সাহসী অফিসার সরান হল, একইসাথে বিডিআর এর কার্যকারিতা খর্ব করা হল। আর্মি এখন আওয়ামি লিগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। পুলিশ আর র্যাব পরিণত হয়েছে আজকের রক্ষীবাহিনীতে। তবে এরাও আজ আর্মির প্রতি বিরূপ না, অন্তত ১৯৭১ পরবর্তী-কালের রক্ষীবাহিনী আর সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব পাবেন না।
যখনই কোনো জঙ্গি ধরা পড়ছে, তাদেরকে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের নামে মেরে ফেলা হচ্ছে, কারণ সরকার জানে জঙ্গিদের পেছনে অনেক বড়ো কারো মদদ আছে। কোনো তদন্ত ছাড়া সরকার বিএনপি-জামাতের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে আর দাবি করছে দেশে নাকি কোনো জঙ্গি নাই। এখান থেকে স্রেফ একটা সিদ্ধান্তেই পৌঁছানো যায়।
হয় সরকার নিজেই সমস্ত জঙ্গিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, অথবা যারা করছে, সে তাদের সাথে আপোস করে থাকতে চাইছে। ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। দ্বিতীয়টি সম্ভাবনা বেশি। সেই ক্ষেত্রে কাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে? ভারতকে? বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারলে কার লাভ?